
ঈদের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে খান বাড়ির ব্যতিক্রমী আয়োজন
খান বশির
সময়ের স্রোতে অনেক কিছুই বদলে যায়, হারিয়ে যায় পারিবারিক ও সামাজিক ঐতিহ্যগুলো। এমনই এক হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে এগিয়ে এসেছে খান বাড়ির সদস্যরা। একসময় ঈদের নামাজ শেষে পুরো পরিবারের সবাই একসাথে বসে মিষ্টিমুখ করত, আনন্দ ভাগাভাগি করত। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই প্রথা যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। শহরের ব্যস্ততা, আধুনিক জীবনের যান্ত্রিকতা, আত্মীয়স্বজনদের দূরত্ব—সব মিলিয়ে ঈদের সেই চিরচেনা আনন্দ অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে।
খান বাড়ির এই ঐতিহ্যের শুরু আজ থেকে ৫০ বছর আগে। পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যরা জানান, ঈদের দিন ফজরের নামাজের পর সবাই ঈদগাহে যেত একসঙ্গে। নামাজ শেষে বাড়ি ফিরে একত্রে বসে মিষ্টি ও অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী খাবার খাওয়া হতো। এটি ছিল পরিবারের সবাইকে একত্রিত করার এক অনন্য প্রথা। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে কাজের ব্যস্ততা, দূরত্ব এবং সামাজিক পরিবর্তনের কারণে এই ঐতিহ্য ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে।
এই ঐতিহ্য আবারও ফিরিয়ে আনতে খান বাড়ির বর্তমান প্রজন্ম বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। এবার ঈদের দিন তারা সবাই একসঙ্গে বসে পুরনো ঐতিহ্য মেনে মিষ্টিমুখ করে। ছোট থেকে বড় সবাই একসঙ্গে এই আনন্দ ভাগ করে নেয়। এমনকি যারা দূরে থাকে, তারাও ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসছে শুধুমাত্র এই ঐতিহ্যকে নতুন করে বাঁচিয়ে রাখার জন্য।
খান বাড়ির বড় ছেলে ইলিয়াস খান, বশির খান বলেন, ‘শহরের জীবনে আমরা সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। আত্মীয়স্বজনের সাথে দেখা-সাক্ষাতও কমে গেছে। ঈদের দিন অন্তত সবাই মিলে একসঙ্গে বসে কিছু সময় কাটানো উচিত। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এই ঐতিহ্যকে আবার ফিরিয়ে আনবো।’ পরিবারের প্রবীণ সদস্য মান্নান খান বলেন আগে ঈদের দিনটা ছিল আনন্দময়। সবাই মিলে একসঙ্গে সময় কাটাতাম। নতুন প্রজন্ম এই উদ্যোগ নিয়েছে জেনে খুব ভালো লাগছে।’
খান বাড়ির এই উদ্যোগ শুধু তাদের পরিবারের জন্য নয়, সমাজের অন্যান্য পরিবারের জন্যও একটি অনুপ্রেরণা হতে পারে। পরিবারে বন্ধন দৃঢ় করতে এবং ঈদের আনন্দ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে এমন ঐতিহ্য ধরে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শহরের কোলাহলে হারিয়ে যাওয়া এই ধরনের পারিবারিক ঐতিহ্য আবারও ফিরিয়ে আনতে অন্যরাও উদ্যোগ নিলে পারিবারিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে এবং ঈদের আনন্দ ফিরে আসবে আগের মতোই।